Wednesday, September 3, 2008

বায়ু-দূষণ নিবারণ প্রকল্প


সঙ্গে দেওয়া লিংক থেকে ফন্ট ফ্রি ডাউনলোড করে ‎নিন৤ ‎
বিনামূল্যে বাংলা ইউনিকোড ফন্ট সরাসরি ডাউনলোড করুন নীচের এই লিংকে ক্লিক করে৤



 উন্নত দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলা ফন্ট "অহনলিপি-বাংলা১৪"


https://sites.google.com/site/ahanlipi/font-download/AhanLipi-Bangla14.zip

অথবা 

https://sites.google.com/site/ahanlipi/



==================


 বাবিকা (বাতাস বিশুদ্ধিকারক)



মনোজকুমার  
মণীশ পার্ক, কোলকাতা, ভারত



বায়ু-দূষণ নিবারণ প্রকল্প
(জ্ঞান ও বিজ্ঞান৤ মে-জুন ১৯৮৪,
৩৭বর্ষ, ৫ম-৬ষ্ঠ সংখ্যা)
পরিবেশ সংখ্যা 


===============================





(If you download Bangla Unicode font available free of cost from the link:
and install the font and keyboard, then you will be able to read the these pages easily.)

 বাবিকা (বাতাস বিশুদ্ধিকারক)

বায়ু-দূষণ নিবারণ প্রকল্প
(জ্ঞান ও বিজ্ঞান৤ মে-জুন 1984,
37তম বর্ষ, 5ম-6ষ্ঠ সংখ্যা)
পরিবেশ সংখ্যা

বায়ু-দূষণ নিবারণ প্রকল্প
মনোজকুমার মিত্র

91/2, ডাঃ গিরীন্দ্রশেখর বসু রোড, কলিকাতা-700039 

পৃঃ 176--182
=============================

          বিশ্বে যত বড় বড় শহর আছে সেগুলিতে বায়ু-দূষণ এক বড় সমস্যা৤ সমস্যা অন্যত্রও৤ 
         
          পরিবেশ-দূষণ বিভিন্নভাবে হতে পারে-- জল দূষিত হয়ে, বায়ু দূষিত হয়ে, অধিক পরিমাণে শব্দ সৃষ্টি হয়ে৤ এর কোনটাই অবহেলার যোগ্য নয়৤ শব্দদূষণের ব্যাপারটা হয়তো এখনও বিশেষ গুরুত্ব পায়নি আমাদের দেশে৤ আমরা পরিবেশ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন নই, এটা তার একটা কারণ হতে পারে৤ তবে কালী পুজোর সময়ে চারিদিকে পটকার আওয়াজ, মাইকের তারস্বরে চীৎকার, কানে তালা লাগা বাসের হর্ন, রেলের তীব্র বাঁশি ইত্যাদিতে আমরা মাঝে মাঝে ব্যাপারটা বুঝতে পারি৤

          জল-দূষণের সমস্যাও আমরা এতদিনে বেশ বুঝতে পেরেছি৤ জল-দূষণের জন্য পেটের রোগ এবং স্বাস্থ্যহানি আমাদের কাছে এক সমস্যা-- যা অতিক্রম করা বেশ কঠিন ব্যাপার৤

          পরিবেশ দূষণের মধ্য বায়ু-দূষণই সর্বাপেক্ষা কঠিন সমস্যা৤ কারণ শ্বাসের সঙ্গে আমরা প্রতি মুহূর্তে ফুসফুসে বাতাস টেনে নিচ্ছি৤ এই বাতাস যদি বিশুদ্ধ না হয়, তবে তার ফল যে ভয়াবহ হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৤

          একটি সংবাদপত্র বিশেষজ্ঞের অভিমত তুলে ধরেছেন, “যেখানকার বাতাসে হাইড্রোজেন সালফাইড-এর পরিমাণ বেশি সেখানকার লোকেদের প্রথমটা মাথা ধরবে, পরে দেখা দিতে পারে পক্ষাঘাত৤ যেখানে সালফার ডাই-অক্সাইড বেশি সেখানে হবে হাঁপানি ও শ্বাসের রোগ৤ যে অঞ্চলের বাতাসে ধূলিকণা ভর্তি সেখানে হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে৤ আর বাতাসে ঝুল জাতীয় বস্তুর আধিক্যে ডেকে আনতে পারে মারাত্মক ফুসফুসের ক্যানসার রোগকে”(সত্যযুগ-- 6.11.81)৤

          বাতাস দূষিত হয় সারা বছর সারা মাস প্রতিটি মুহূর্তে৤ যদি বায়ু প্রবাহ থাকে, তবে দুষিত বাতাস সরে গিয়ে বিশুদ্ধ বাতাস এসে খানিকটা ক্ষতিপূরণ করতে পারে৤ এই বায়ু-প্রবাহ সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতি নির্ভর৤ শীতকাল বাদে সারা বছর কলকাতা শহরের উপর দিয়ে বাতাস কম-বেশি বয়ে যায়, তাতে দূষিত বাতাস কিছু পরিমাণে বিশুদ্ধ বাতাসের সঙ্গে মিশে বায়ু-দূষণ খানিকটা হয়তো কমে৤ ঝড়ের বেগে বাতাস প্রবাহিত হলে বাতাসের দূষণ বেশ কমে যায়, বাতাস সরে যায় এবং পাশের বিশুদ্ধ বাতাস এসে স্থান পূরণ করে৤  

          এছাড়া, বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের ফলে, বৃষ্টির জলে বাতাসের বিষ খানিকটা ধুয়ে যায় এবং বাতাস কিছু পরিমাণে শুদ্ধ হয়ে ওঠে৤ কিন্তু এসবই সাময়িক এবং প্রকৃতি নির্ভর৤ (অকটোবর, ২০১৮ --সম্প্রতি আন্দবাজার পত্রিকা বায়ুদূষণ তথ্য রোজই দেয়৤ দেখা যায় যেদিন বৃষ্টি হয় সেদিন বায়ুদূষণ কমে যায়৤) দূষিত বাতাস বিশুদ্ধ করার এক নিয়মিত ব্যবস্থা থাকা দরকার৤ মানুষকে নিজের হাতেই সে ব্যবস্থা করে নিতে হবে৤

          শীতের দিনে যখন বাতাস স্থির, সন্ধ্যায় কুয়াশার সঙ্গে ধোঁয়া মিলে চারিদিক ধোঁয়াশায় ভরে যায় এবং শুকনো আবহাওয়ার জন্য গাড়ির চাকায় ধুলো ওড়ে, তখন অবস্থা খুবই ভয়াবহ৤ যাঁরা এই ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছেন তাঁরা হাড়ে হাড়ে তা উপলব্ধি করেছেন৤ শীতের সন্ধ্যায় একবার বিবাদী বাগ এলেই এটা স্পষ্ট বোঝা যাবে৤ 

          বায়ু-দূষণ রোধ করতে হলে দুটো ব্যবস্থা নিতে হবে৤ এক, বাতাস যাতে দূষিত হতে না-পারে তার ব্যবস্থা করা অর্থাৎ বায়ু-দূষণের উৎস বন্ধ করা বা উৎস-স্থানেই দূষণ প্রতিরোধ করা৤ দুই, যে-বাতাস দূষিত হয়ে পড়েছে তা বিশুদ্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া৤

          এই ব্যবস্থা যেহেতু ব্যাপকভাবে নিতে হবে, সেজন্য এই ব্যবস্থা হতে হবে জটিলতা-মুক্ত, সহজ এবং অল্প ব্যয়সাপেক্ষ৤

          বায়ু-দূষণ প্রতিরোধ করার জন্য আমি একটা সহজ পরীক্ষা করেছি, এবং পরীক্ষালব্ধ ফল খুবই আশাপ্রদ৤ এটা একটা প্রাচীন ব্যবস্থার নব্যরূপ বলা যায়৤ এই ব্যবস্থা যে-কোন শহরের বায়ু-দূষণ নিবারণের পক্ষে সহায়ক হবে৤

          বাতাসে যেসকল পদার্থ বায়ু-দূষণের সৃষ্টি করে সেগুলি হল-- (1)কণা, (2)কার্বন মনোক্সাইড, (3)সালফার অক্সাইড, (4)হাইড্রো-কার্বন, (5)নাইট্রোজেন অক্সাইড ইত্যাদি৤

          এর সবগুলিই কম-বেশি জলে দ্রবীভূত হয়৤ সেজন্য যদি এইসকল দ্রব্য-মিশ্রিত-বাতাস জলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা করা যায় তবে, এই সকল পদার্থের একটা বড় অংশ জলে গুলে গিয়ে বা ভিজে গিয়ে, জলের মধ্যে থেকে যাবে এবং যে-বাতাস জল পরিক্রমণ করে বেরিয়ে আসবে তা কাম্য বিশুদ্ধতায় পৌঁছাবে৤

          আমাদের দেশে ধূমপানের জন্য হুঁকার ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে৤ এতে ধোঁয়া জল পরিক্রমণ করে আসে বলে ধোঁয়ার মধ্যস্থ ক্ষতিকর পদার্থের একটা অংশ জলে দ্রবীভূত হয়ে যায় এবং ধূমপানকারী যে ধূম গ্রহণ করেন তা-- সিগারেট, বিড়ি, চুরুট ইত্যাদির চেয়ে কম ক্ষতিকর৤

           হুঁকার এই ধোঁয়া যদি একাধিকবার জল-পরিক্রমণ করিয়ে আনা যায় তবে দেখা যাবে যে, শেষ পর্যায়ে কয়েকবার জল পরিক্রমা করার পর, ধোঁয়ার অস্তিত্ব আর নেই৤ এমনকী তামাকের যে গন্ধ তা অবধি অন্তর্হিত হয়েছে৤ তামাকের যে ধোঁয়া কল্কে থেকে হুঁকার নলের  মধ্য দিয়ে জলের ভিতরে প্রবেশ করেছে, তার অস্তিত্ব ক্রমে বিলীন হতে হতে ধূমপান-অভিলাষীর কাছে যা বেরিয়ে আসছে তা অনেকটা বিশুদ্ধ বাতাস৤

          এই পদ্ধতিটিই নগরের বাতাস পরিশুদ্ধিকরণের কাজে ব্যবহার করা হবে৤

          জল ছাড়া অন্য আরও রাসায়নিক পদার্থের মধ্য দিয়ে বায়ু প্রবাহিত করলে বাতাস পরিশুদ্ধ করা যায়, এবং বায়ুর শুদ্ধির মান তাতে আরও বাড়বে কিন্তু সেরকম পদ্ধতি ব্যয়বহুল হবে৤ বায়ু-পরিশুদ্ধি যে স্তরে উঠলে বাতাস ব্যবহারযোগ্য এবং নিরাপদ হবে, তা বায়ুর জল-পরিক্রমণ দ্বারাই অল্পায়াসে এবং অল্প ব্যয়ে লাভ করা যাবে৤

          একটি গোলাকার বা চৌকো অর্ধস্বচ্ছ পলিথিন পাত্র নেওয়া হল৤ পাত্রটি লম্বালম্বি সমান আটটি প্রকোষ্ঠে ভাগ করা৤ ইচ্ছা করলে প্রকোষ্ঠ-সংখ্যা আরও বেশি করা যেতে পারে৤ এই প্রকোষ্ঠগুলিকে জল দিয়ে এমনভাবে ভরতে হবে যেন জলের গভীরতা হবে মোট উচ্চতার অর্ধাংশ, বাকি উপরের স্থানটুকু ফাঁকা থাকবে৤ অসমবাহু সম্বলিতে ইউ(U) আকৃতির নল দ্বারা পাশাপাশি প্রকোষ্ঠগুলি সংযুক্ত থাকবে৤ সংযোগকারী নলের ক্ষুদ্রবাহু থাকবে প্রথম প্রকোষ্ঠের ফাঁকা অংশে, এবং নলের দীর্ঘ বাহু থাকবে দ্বিতীয় তথা পরবর্তী প্রকোষ্ঠের জল-তলের বেশ খানিকটা নিচে৤ দ্বিতীয় প্রকোষ্ঠ ঠিক এমনিভাবে অসমবাহু নল দ্বারা পরবর্তী, তথা তৃতীয় প্রকোষ্ঠের সঙ্গে যুক্ত থাকবে৤ অসমবাহু নলের ছোটো বাহু পূর্বের মতোই দ্বিতীয় প্রকোষ্ঠের ফাঁকা অংশে থাকবে এবং বড় বাহু তৃতীয় প্রকোষ্ঠের জল-তলের খানিকটা নিচে বাড়ানো থাকবে৤ ঠিক এই রকমই তৃতীয়ের সঙ্গে চতুর্থ, চতুর্থের সঙ্গে পঞ্চম ... ইত্যাদি, অসমবাহু নল দ্বারা যুক্ত হবে৤ এভাবে প্রথম প্রকোষ্ঠটি শেষ প্রকোষ্ঠের সঙ্গে একাদিক্রমে(in series) যুক্ত হয়ে গেল৤  

          এবার যদি শেষ প্রকোষ্ঠের শেষ নলটির সঙ্গে বৈদ্যুতিক সাকশন ফ্যান-মোটর তথা পাম্প লাগানো হয়, তবে প্রকোষ্ঠগুলির ভেতরকার বাতাস এই সাকশন পাম্প টেনে বাইরে বের করে আনবে, ফলে পূর্ববর্তী প্রকোষ্ঠগুলির ভিতরের বাতাস পরবর্তী প্রকোষ্ঠগুলিতে সঞ্চালিত হবে এবং এইভাবে প্রথম প্রকোষ্ঠের বাতাস ক্রমে শেষ প্রকোষ্ঠে চলে আসবে এবং বাইরে বেরিয়ে আসবে৤ প্রথম প্রকোষ্ঠে বাইরে থেকে দূষিত বাতাস ঢুকবে এবং এক-একটি প্রকোষ্ঠ অতিক্রম করার ফলে জলের মধ্য দিয়ে তা প্রবাহিত হবার কালে বায়ুর দূষিত অংশগুলি জলে রয়ে যাবে, এবং শেষ প্রকোষ্ঠ দিয়ে নির্গমনের কালে বিশুদ্ধ বাতাস বের হবে৤


বাবিকা (বাতাস বিশুদ্ধি কারক)




(ছবিটি দেখতে কঠিন হলেও ব্যাপারটি খুব সোজা)

          প্রথম কক্ষের প্রথম নলটির বাইরের দিকে একটি চোঙা লাগানো থাকবে এবং সেটির মুখ সূক্ষ্ম নাইলন নেট দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে, যাতে খুব বড়ো কণা বা পতঙ্গ ইত্যাদি ঢুকতে না পারে৤ নলটির অপর দিকটি কক্ষের ভিতরকার জলের মধ্যে ডুবানো থাকবে৤ 
   
                                                  
                             বাবিকা -- সামনের অংশ 

শেষ কক্ষের শেষ নলটির একটি মুখ কক্ষের ভিতরের ফাঁকা স্থানে থাকবে, এবং বাইরের অন্য মুখটিতে বৈদ্যুতিক সাকশন ফ্যান-মোটর তথা পাম্প লাগানো থাকবে৤ যদি সাকশন ফ্যান চালানো হয়, তবে জোরে বাতাস শোষণ করার জন্য কক্ষগুলির ভিতরের বাতাস টেনে বার করবে৤ 
বাবিকা -- পিছনের অংশ এবং প্ল্যান 

প্রথম কক্ষে টেনে নেওয়া বাইরের দূষিত বায়ু শেষ কক্ষের নল দিয়ে বের হবার সময়ে বিশুদ্ধ বাতাস হিসেবে বের হবে৤ বাতাসের দূষিত অংশ বহুল পরিমাণে জলে গুলে গিয়ে সেখানেই থেকে যাবে৤

          রাস্তার পাশে যেসকল লাইটপোস্ট আছে, এই বাতাস-বিশুদ্ধিকারক তথা “বাবিকা” একটি ছোটো যন্ত্র, যা লাইটপোস্টের উপরে স্থাপন করা যাবে৤ বাবিকা চালানোর বিদ্যুৎ এই সকল লাইট পোস্ট থেকেই সংগ্রহ করা যাবে৤ জল সরবরাহের যে পাইপ রাস্তা দিয়ে গেছে, বাবিকার জন্য সেই পাইপ থেকে জল সরবরাহ পাওয়া যাবে৤ লাইটপোস্টের সঙ্গে ফিট করার জন্য উপযুক্ত ফিটিংস ব্যবহার করতে হবে৤ এসকল ব্যবস্থার জন্য ব্যয় খুব বেশি পড়বে না৤

বাবিকা কার্যবিবরণী--
          প্রথমে যে নলটি পলিথিন পাত্রের প্রথম কক্ষে ঢুকবে সেটির একটি মাথা প্রথম কক্ষে অবস্থিত জলের ভিতর অবধি যাবে৤দ্বিতীয় প্রান্তটি বাইরে একটি চোঙের সঙ্গে লাগানো থাকবে৤ শোষিত বাতাস এই চোঙ দিয়ে ভিতরে ঢুকবে৤ চোঙের মুখ সূক্ষ্ম নাইলন নেট দ্বারা আবৃত থাকবে যাতে বাতাসে ভাসমান বড়ো কণা, টুকরো কাগজ, পোকামাকড়, পতঙ্গ বা ছোটো পাখি, আঁশ, তুলো  ইত্যাদি ভিতরে ঢুকে যেতে না পারে৤
          প্রথম কক্ষ থেকে বাতাস দ্বিতীয় কক্ষে যাবার সংযোগকারী নল থাকবে, এবং ঠিক একইভাবে দ্বিতীয় থেকে তৃতীয়, তৃতীয় থেকে চতুর্থ ইত্যাদি হয়ে অষ্টম বা শেষ কক্ষে বাতাস এসে পৌঁছাবে৤ প্রতিবারেই এক কক্ষ থেকে আর এক কক্ষে যাবার সময় বাতাস জলের ভিতর দিয়ে পথ অতিক্রম করবে৤ এর ফলে এক-একটি কক্ষ ত্যাগের সময় বাতাস পূর্বাপেক্ষা পরিশুদ্ধ হয়ে উঠবে৤ অষ্টম বা শেষ কক্ষ থেকে বাতাস বের হয়ে বাইরে আসবে একটি শোষক-পাম্পের(সাকশন পাম্প) টানে৤ প্রথম কক্ষে চোঙ দিয়ে বাতাস ঢুকবে এবং শেষ কক্ষ দিয়ে বাতাস বেরিয়ে যাবে৤ মধ্যবর্তী কোনও কক্ষ দিয়ে বাতাস ঢোকা বা বের হওয়া প্রতিরোধ করার জন্য নল এবং পলিথিন পাত্রের সংযোগগুলি ভাল করে বন্ধ দিতে হবে৤

           বাবিকা দিনে রাতে সব সময়ে চলবে৤ দূষিত বাতাস পলিথিন-পাত্রের বিভিন্ন কক্ষের ভিতর দিয়ে অতিক্রম করার সময় তার কলুষ পদার্থ জলের মধ্যে ধুয়ে কিছু পরিমাণে থেকে যাবে৤ ফলে জল ক্রমে ঘোলা বা নোংরা হয়ে উঠবে এবং ধীরে ধীরে বাতাস পরিশুদ্ধ করার মতো আর বেশি ক্ষমতা থাকবে না৤ এজন্য নিয়মিতভাবে পলিথিন পাত্রে জল প্রবেশের ও নির্গমের ব্যবস্থা রাখতে হবে৤ একটি পাইপ দিয়ে কক্ষে জল ঢুকবে এবং অন্য একটি পাইপ নিচে লাগিয়ে জল বের করে দিতে হবে৤ প্রবেশ ও নির্গম নলের জলের প্রবাহ এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যে, কক্ষের ভিতরে জল সর্বদাই একটা নির্দিষ্ট জল-তল রক্ষা করে চলবে৤ 




          পলিথন পাত্রের বিভিন্ন কক্ষ থেকে সরু নল এসে একটি অন্য বড় মোটা নলে যুক্ত হবে, জল সেখান থেকে নিচে নেমে নর্দমায় পড়বে৤ আর অন্য একটি মোটা নল দিয়ে পলিথিন পাত্রে জল সরবরাহ হবে এবং সরু নলযোগে পলিথিন পাত্রের সব কক্ষে যাবে৤

          শহরের যে-সকল অঞ্চলে বাতাস দূষিত হচ্ছে, সেই সকল অঞ্চলের প্রতিটি লাইটপোস্টে একটি করে বাবিকা চালু রাখতে হবে৤ এটি একটি অতি সাধারণ যন্ত্র-ব্যবস্থা হলেও এর কার্যকারিতা যথেষ্ট৤ যেমন-- 

          1. কণা-- বাতাসে ভাসমান ধূলি, পাট বা তুলোর আঁশ বা অন্যান্য ভাসমান বস্তু বাবিকার সাহায্যে শতকরা একশত ভাগই অপসারিত হয়ে যাবে৤ বাতাসে ধূলি কণা ইত্যাদির উপস্থিতি তথা শতকরা হার বিশেষভাবে গণ্য৤

          2. কার্বন মনোক্সাইড-- কলকাতার বাতাসে আছে প্রায় 66% শতাংশ(তথ্য, আকাশবাণী কলকাতা
--4.6.81 )৤ কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস শরীরের পক্ষে খুব ক্ষতিকর৤ এই গ্যাস জলে গলে যায় বা মিশ্রিত হতে পারে৤ একাধিকবার পলিথিন কক্ষের জলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হবার কালে এর একটা বড় অংশ জলে গুলে গিয়ে জলেই থেকে যাবে এবং বাতাস দোষমুক্ত হবে৤

          এছাড়া, সালফার অক্সাইড, হাইড্রো কার্বন, নাইট্রোজেন অক্সাইড ইত্যাদিও জলে কিছু পরিমাণে গুলে যায়, এবং একাধিকবার জলের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হবার কালে বেশ কিছু পরিমাণে জলে গুলে গিয়ে বাতাস পরিশুদ্ধ হয়ে উঠবে৤

          এই ব্যাপারে প্রাথমিক পরীক্ষায় যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জন ফল লক্ষ করা গেছে৤ এই ব্যবস্থা যদি শহরে তৎপরতার সঙ্গে ব্যবহার করা হয় তবে দ্রুত এবং কার্যকর ফললাভ হবে বলে আশা করা যায়৤

          কলকাতা শহরে ধোঁয়া একটি প্রধান সমস্যা৤ উনুন(উনুন এখন অনেক কম, ২০১৮ খ্রিঃ), কলকারখানার চিমনি, এবং ডিজেল, পেট্রল গাড়ি ইত্যাদি হল ধোঁয়ার উৎস৤ বর্তমানে ডিজেল জেনারেটর, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে৤ শহরে প্রায় এক লক্ষ ত্রিশ হাজার গাড়ি আছে পেট্রল চালিত, এবং প্রায় পনেরো হাজার ডিজেল চালিত গাড়ি(২০০৮)৤ গত দুই বছরে প্রায় দশ হাজার গাড়ি বেড়েছে রাস্তায়৤ এই সব মিলিয়ে বায়ু-দূষণ যে কী পরিমাণে বেড়েছে তা অনুমান করা খুব কঠিন নয়৤ অথচ বায়ু-দূষণ রোধ করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা খুব কমই গ্রহণ করা হয়েছে৤ গত দুই বছরে প্রায় দশ হাজার গাড়ি বাড়লো-- দশ হাজার গাছও হয়তো লাগানো হয়েছে, কিন্তু তবু অনেক রাস্তায় সব সময়েই যেন মনে হয় ধোঁয়ায় ভরা৤ জনৈকা বিদেশিনিকে গত বছর কলকাতা “কেমন লাগছে জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, এই নিয়ে চারবার কলকাতা এলাম, কিন্তু এবারে যেন বেশি ভিড় আর ধোঁয়া কলকাতাকে গ্রাস করে ফেলেছে৤” 
        (পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর লন্ডন সফরে মন্তব্য-- লন্ডনে “ধোঁয়াধুলোও প্রায় নেই বললেই চলে”-- আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৯.০৭.২০১৫)


          কলকাতায় অনেক সমস্যা আছে-- রাস্তায় জল জমা, পরিবহণ, পাতালরেল, সরু এবং অবিন্যস্ত পথঘাট, বাসস্থান ইত্যাদি৤ কিন্তু সবচেয়ে জরুরি এবং কঠিন সমস্যা হল বায়ু-দূষণ৤ বর্ষার জমা জল বের করে দেবার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে-- কিন্তু বায়ু-দূষণ? এর জন্য কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? গাছ লাগানো ভালোই-- কিন্তু শুধু কিছু গাছ লাগালেই অবস্থার  কোন বিশেষ উন্নতি বা পরিবর্তন হবে না৤ জল জমলে লোকে দুর্ভোগ ভোগে কয়েকদিন৤ বায়ু-দূষণের জন্য প্রতিদিন প্রতিটি মুহূর্তে দুর্ভোগ ভুগতে হচ্ছে-- ব্যাপারটা যে নিশ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে জড়িত৤

          কোন কবি হয়তো লিখবেন, বাতাস তুমি কি কেবলি ধোঁয়া? বাতাস দূষিত হলে যে-ব্যবস্থা নেওয়া যায় 
সে-সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা গেল৤ কিন্তু যেসকল কারণে বায়ু-দূষণ ঘটছে তার উৎসগুলি যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তবে বায়ু-দূষণ কমে যাবে৤ বায়ু দূষিত হচ্ছে প্রধানত ধুলো এবং ধোঁয়ায়৤ ধোঁয়ার মধ্যে নানাপ্রকার গ্যাস থাকে যা শরীরের ক্ষতি করে৤

          ধুলো এবং ধোঁয়া নিবারণ করার জন্য পূর্বোক্ত পদ্ধতিতে যন্ত্র তৈরি করে ব্যবহার করতে হবে৤

          ধুলোর উৎস হল-- কয়লাপোড়া ছাই, রাস্তার পাশে তুলে রাখা নর্দমার কাদা-শুকানো ধুলো, রাস্তা এবং ফুটপাথ খোঁড়ার জন্য ইট , মাটির গুঁড়ো ইত্যাদি এবং তুলো, পাট ইত্যাদির আঁশ৤ এগুলি গাড়ি চলাচলের সময়ে চাকায় লেগে বাতাসে উড়তে থাকে৤ খুব হালকা বলে একবার ধূলিকণা বাতাসে উড়লে সহসা মাটিতে নামে না৤

          রাস্তার ধূলি দূর করার জন্য পূর্বোক্ত পদ্ধতিতে পরিবহণযোগ্য একটি “পথ-ধূলি-শোষক” যন্ত্র তৈরি করতে হবে৤ তবে পথে যাতে কয়লার ছাই এবং নর্দমার কাদা শুকিয়ে পড়ে না থাকে সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে সবার আগে৤

          এই “পথ-ধূলি-শোষক” যন্ত্রে একটি পলিথিনের জলপাত্র থাকবে৤ একটি ফ্রেমের ভিতরে লরির উপরে এটি রাখা হবে৤ জলপাত্রের অর্ধাংশ জলে ভরা থাকবে৤ একটি মোটা নলের এক মুখ পাত্রের জলে ডোবানো থাকবে, অন্য মুখ নরম ফ্লেক্সিবল্‌ পাইপের সঙ্গে যুক্ত থাকবে৤ নরম পাইপের অন্য মুখ রাস্তা থেকে ধুলি শোষণ করে নেবে, এজন্য এর প্রান্তে একটা ছোটো খাঁচা থাকবে রাস্তা থেকে পাইপের মুখের সামান্য দূরত্ব বজায় রাখার জন্য এবং পাইপের মুখ যাতে আটকে না যায় সেজন্য নাইলনের সূক্ষ্ম জাল দিয়ে পাইপের মুখটা ঢাকা থাকবে৤ রাস্তায় পড়ে থাকা কাগজের টুকরো, পাতা ইত্যাদি তা না হলে নলের মুখ আটকে দিতে পারে৤

          পলিথিন জলপাত্রের সঙ্গে আর একটি পাইপ লাগানো থাকবে যার একটা মুখ থাকবে পাত্রের ভিতরের ফাঁকা অংশে৤ পাইপটির অন্য মুখ লাগানো থাকবে জোরালো ব্যাটারি/ডিজেল চালিত সাকশন পাম্পের সঙ্গে৤ এই সাকশন পাম্প চালালে পাত্র মধ্যস্থ বাতাস টেনে বার করে দেবে এবং ফলে পলিথিন পাত্রে লাগানো অপর দিকের নরম পাইপ দিয়ে ধূলি সহ বাতাস জলপাত্রে প্রবেশ করবে৤ পাইপের যে মুখ দিয়ে বাতাস জলপাত্রে ঢুকছে সেই মুখের কাছে পথের উপরে যে ধূলি জমা আছে তা ব্রাশ দিয়ে নাড়িয়ে উড়িয়ে দিলে যন্ত্র তা জল পাত্রের মধ্যে শুষে নেবে এবং পাত্রে ঢুকে তা জলে ভিজে সেখানে থেকে যাবে৤

          জলপাত্রের তলা এমন ঢালুভাবে তৈরি হবে যে ভিতরের কাদা ইত্যাদি এসে নির্গম নলের মুখে জমবে এবং নির্গম নল খুলে মাঝে মাঝে প্রয়োজন মতো ভিতরের ময়লা বের করে দিতে হবে৤ রাস্তার ধুলো জলে ভিজে এই কাদা ময়লা তৈরি হবে৤

          যে-সকল লরি জল সরবরাহ করে সেগুলি যেমনভাবে জল সংগ্রহ করে, এই সব ধূলি-শোষক তার অনুকরণে নরম নলের সাহায্যে পলিথিন জলপাত্রে প্রয়োজনীয় জল সংগ্রহ করবে৤

        ধোঁয়ার প্রধান উৎস
                   (ক)কয়লা পোড়ানো ধোঁয়া:--
                   কলকাতায় বর্তমানে প্রায় 91 লক্ষ লোকের বাস(২০০৮), অর্থাৎ গড়ে (পরিবার পিছু ৬জন লোক ধরে) পনেরো লক্ষ পরিবার৤ এবং কম করে 14 লক্ষ উনুন রোজ ধোঁয়া ছাড়ে, অধিকাংশ আবার দুইবেলা(তখন গ্যাস কানেকশন খুবই কম ছিল, কেরোসিন স্টোভে রান্নার রীতিও কম ছিল--২০১৮)৤ এইসকল উনুন সকালে সূর্যোদয়ের সময়ে এবং সন্ধ্যার সূর্যাস্তের কালে প্রায় সবগুলি একই সময়ে জ্বালানো হয়৤ বিশেষ করে শীতের দিনে সন্ধ্যা বেলায় যে কঠিন অবস্থা তৈরি হয় তা শহরবাসী সবাই দেখতেই পান৤ সমস্ত দিন ধুলো ময়লা এবং ধোঁয়া নানা উৎস থেকে বাতাসে মিশতে থাকে, সন্ধ্যাবেলায় যখন তার সঙ্গে একই সময়ে কয়েক লক্ষ উনুন ধোঁয়া সংযোগ করে তখন তা ধূম্র-নরক তৈরি করে৤ শীতকালে বাতাসে কোনও প্রবাহ থাকে না বলে অন্য সময়ের চেয়ে অবস্থা কঠিনতর হয়৤  




          কেরোসিন সরবরাহ নিয়মিত এবং প্রচুর হলে, কয়লার ব্যবহার কমবে, এবং ধোঁয়া কম হবে৤ বোম্বাই শহরে(এখন মুম্বই) রান্নার জন্য ধোঁয়ার উৎপাদন খুবই কম, কারণ প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে৤ কলকাতায় উল্টো, মনে হয় ধোঁয়া উৎপাদন প্রাত্যহিক-- বিশেষ করে প্রভাতী কর্তব্য! কয়লা সবচেয়ে সস্তা জ্বালানি-- এই বলে বিজ্ঞাপন প্রচার করে সরকার ধোঁয়া উৎপাদনে উৎসাহই দিচ্ছেন৤

          গৃহস্থের উনুন ছাড়া কয়লা পুড়িয়ে অনেক কল-কারখানায় দিনরাত কাজ হয়-- সেই ধোঁয়া বাতাসে মেশে৤

          (খ)কেরোসিন:--
               কেরোসিন পুড়িয়ে ধোঁয়া বা গ্যাস উৎপাদন করে থাকে কেরোসিন স্টোভ, কুপি/লম্ফ বা বাতি, হ্যারিকেন ইত্যাদি৤ ফিতেযুক্ত যে সকল কেরোসিন কুকার রান্নার পর ফুঁ দিয়ে নেভানো হয়, তা থেকে অত্যন্ত কটু-গন্ধপূর্ণ ধোঁয়া বের হয়, যা সহ্য করা কঠিন৤ এমনকী পাশের বাড়ির লোকেরা অবধি স্টোভ নেভানো টের পান এবং বিরক্ত হন৤ তবে বর্তমানে গ্রাভিটি স্টোভ যা বিভিন্ন কোম্পানি বাজারে বের করেছেন বিভিন্ন নাম দিয়ে সেগুলি অনেক সুবিধাজনক৤ অন্তত নেভানোর কালে এই প্রকার উৎকট গন্ধের উৎপাত নেই৤ (এই  গ্র্যাভিটি স্টোভগুলি বর্তমানে অবশ্য চালু নেই--২০১৮)৤



         (গ)পেট্রল, ডিজেল:--
                   প্রায় দেড় লক্ষ মোটোর গাড়ি, লরি, টেম্পো, মোটোর সাইকেল ইত্যাদি ধোঁয়া ছাড়ছে পেট্রল বা ডিলেজের৤ এছাড়া, ডিজেল ইঞ্জিন, ডিজেল জেনারেটর ইত্যাদিও আছে৤ যারা ভুস করে অন্যের নাকের উপর ধোঁয়া ছেড়ে দিয়ে ছোটে, তারা যে নিজের নাকের উপরেই ধোঁয়া ছাড়ছে এতদিনে বোধকরি তা বেশ উপলব্ধি করা গেছে৤

          (ঘ)রাসায়নিক ধোঁয়া:--
                   বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন জায়গায় রাসায়নিক বিক্রিয়াজনিত ধোঁয়া উৎপন্ন হয়৤ এ্যাসিডে সোনা পোড়ানো বা এই ধরনের অন্যান্য কাজে এ্যাসিড ব্যবহারের জন্য ধোঁয়া, কারখানার রাসায়নিক ধোঁয়া ইত্যাদি বাতাসকে দূষিত করছে৤

          (ঙ)বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ:--
                   বিভিন্ন সময়ে নানা স্থানে অনেক প্রকার দাহ্য পদার্থ পোড়ানোর ফলে ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়৤ যেমন-- টায়ার পোড়ানো, কাঠ আর আবর্জনা পোড়ানো৤ এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে ঘুঁটে, মোমবাতি ইত্যাদি জ্বালানো৤ বন্ধ ঘরে সিগারেট পোড়ানো ধোঁয়াও বায়ু-দূষণের একটা বড় উৎস৤ কলকাতায় রোজ কয়েক লক্ষ সিগারেট পোড়ে৤

          টায়ার, বিদ্যুতের ইনসুলেটেড(আবরণ লাগানো) তার, কাঠ, খড়, ন্যাকড়া বা বিবিধ জিনিস যত্রতত্র পোড়ানো বন্ধ করতে হবে৤ উন্মুক্ত এবং অ-নিয়ন্ত্রিত আগুন জ্বালানো চলবে না৤

          এসকল ছাড়া বিশেষ করে কলকাতা শহরে বায়ু-দূষণের অন্য উৎস হল-- আবর্জনা স্তূপীকৃত হয়ে থেকে যে উৎকট গন্ধ ছড়ায় তা খুব অসহনীয়৤ আবর্জনার বিষবায়ু দূর করতে হলে নিয়মিত এবং দ্রুত আবর্জনা অপসারণ করতে হবে৤ রাস্তার শৌচাগারগুলি নিয়মিত ‘যত্নে’ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে৤ নগরবাসীগণের প্রয়োজন মেটে ‘অন্তত’ ততোগুলি শৌচাগারও তৈরি করতে হবে৤

          উনুনের ধোঁয়া নিবারণ করতে হলে প্রতিটি উনুনের জন্য বাবিকা(বাতাস বিশুদ্ধি কারক) জাতীয় ছোটো হাতে চালানো সহজ যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে৤ 






কলকারখানার যে চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছ সেখানে ধোঁয়ার চিমনিতে যান্ত্রিক বাবিকা লাগাতে হবে, এতে ধোঁয়া নিবারিত হয়ে বায়ু-দূষণ বন্ধ হবে৤ রাসায়নিক ধোঁয়া উৎপাদনকারী কলকারখানাগুলিতেও একই ভাবে যান্ত্রিক বাবিকা ব্যবহার করতে হবে৤

          এ্যাসিডে সোনা পোড়ানো ধরনের কাজে উনুনের ধোঁয়া নিবারণকারী যন্ত্র অর্থাৎ বাবিকা ব্যবহার করতে হবে৤

          পেট্রল বা ডিজেল চালিত গাড়ি, জেনারেটর বা অন্য কোন যন্ত্র যা ধোঁয়া উৎপাদন করে তাদেরও বাবিকা জাতীয় পরিবহণযোগ্য যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে, এতে ধোঁয়া নিবারিত হবে এবং বায়ু-দূষণ প্রতিরোধ করা যাবে৤ এই সকল গাড়ি বা যন্ত্রে লাগানো থাকবে যে বাবিকা, সেই সকল বাবিকায় ব্যবহৃত জল নিয়মিত পালটাতে হবে৤ যেমন গাড়ির ক্ষেত্রে রোজ অথবা যখনই জ্বালানি তেল ভরা হবে তখনই বাবিকার জল পালটানো বাধ্যতামূলক করতে হবে৤ 




         
          দূষিত বায়ু বা ধোঁয়া বাবিকার প্রকোষ্ঠগুলি অতিক্রম করার সময়ে যদি (1)প্রথম চারটি প্রকোষ্ঠে জলের মধ্য দিয়ে, (2)পরবর্তী দুটি প্রকোষ্ঠে এ্যালকোহল(Alcohol)-এর মধ্য দিয়ে, এবং (3)শেষ দুটি প্রকোষ্ঠে পুনরায় জলের মধ্য দিয়ে দূষিত বায়ুকে অতিক্রম করানো যায়, তবে বায়ুর বিশুদ্ধির পরিমাণ আরও বহুলাংশে বাড়বে৤ কারণ, যেসকল পদার্থ বা গ্যাসের মিশ্রণে বাতাস দূষিত হয় তার প্রায় সবগুলিই বেশ পরিমাণে এ্যালকোহলে দ্রবীভূত হয় বা গলে যায়৤ ফলে যে বাতাস যথাক্রমে-- জল, এ্যালকোহল, এবং জল-প্রকোষ্ঠ অতিক্রম করার পর বাবিকার বাইরে আসবে তার বিশুদ্ধির পরিমাণ হবে অনেক বেশি৤ তবে সাধারণভাবে এটা করার দরকার নেই, কারণ এতে খরচ বাড়বে প্রচুর৤ কারখানার বা এই ধরনের প্রতিষ্ঠানাদির ক্ষেত্রে এটা কাজে লাগানো যেতে পারে৤ সাধারণ উত্তাপ (temperature), চাপ(pressure), না রেখে যদি চাপ এবং উত্তাপ প্রয়োজনমতো নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তবে বিশুদ্ধির মান আরও বহুলাংশে উন্নীত হবে৤ বাবিকার ভিতর দিয়ে বায়ু চালিত হবার জন্য জলের সংস্পর্শের ফলে বাতাস শীতল হয়ে আবহাওয়া কিছুটা শীতল করবে৤ শহরময় প্রচুর গাছ লাগিয়ে শহরের বাতাসে অক্সিজেনের অভাব যথাসম্ভব পূরণ করার ব্যবস্থা নিতে হবে৤ শহরের বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কম আছে বলে এক সময়ে সিএমডিএর বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে৤ 

          এই সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বায়ু-দূষণ প্রতিরোধ করা যাবে এবং শহর সহজ বাসযোগ্য হবে৤ এই ব্যবস্থায় ব্যয় কম, ঝামেলা কম, জল বিনামূল্যে লভ্য এবং যেহেতু বায়ু-দূষণ ব্যাপারটি প্রতিটি মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী ইত্যাদির ক্ষেত্রে একান্তভাবে নিবিড় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সেজন্য এটুকু উদ্যোগ শহরস্থ প্রত্যেককেই নিতে হবে৤

          হয় শহর ছাড়তে হবে, নয় বায়ু-দূষণ প্রতিরোধ করতে হবে৤ আমেরিকায় বায়ু-দূষণ, জল-দূষণ, শব্দ-দূষণ আইন করে যথাসম্ভব কঠোরহাতে নিয়ন্ত্রণ করা হয়৤ কিন্তু তবুও যারা ধনী তারা শহরের বাইরে গ্রামে বাস করে, এই সকল দূষণ বিশেষ করে বায়ু-দূষণের হাত এড়াবার জন্য৤




আবেদন

● নিজের পরিবেশকে দূষণ থেকে মুক্ত রাখুন৤

●সকল প্রকার বন্যপ্রাণী ধ্বংস রোধ করুন৤

●খরা, ভূমিক্ষয় ও পরিবেশ দূষণ রোধে বৃক্ষ রোপণ করুন৤

●খাদ্য ও ঔষধে ভেজাল দেওয়ার বিরুদ্ধে দুর্বার জনমত গঠন করুন৤

●সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান মানসিকতা গড়ে তুলুন৤

--কর্মসচিব








=============================

স্ক্যান কপি আপলোড



বাবিকা (বাতাস বিশুদ্ধিকারক)



মনোজকুমার 
মণীশ পার্ক, কোলকাতা, ভারত



বায়ু-দূষণ নিবারণ প্রকল্প
(জ্ঞান ও বিজ্ঞান৤ মে-জুন ১৯৮৪,
৩৭বর্ষ, ৫ম-৬ষ্ঠ সংখ্যা)
পরিবেশ সংখ্যা 






কৃতজ্ঞতা: 
আমার হাতে করা ড্রইং থেকে ছবিগুলি সানন্দে এঁকে সহায়তা করেছেন সহকর্মী স্বরূপ মণ্ডল৤




মূল পৃষ্ঠাগুলি নিচে দেখানো হল 


























জ্ঞান ও বিজ্ঞান পত্রিকার কর্মসচিবের আবেদন





বায়ু-দূষণ নিবারণ প্রকল্প
জ্ঞান ও বিজ্ঞান৤ মে-জুন ১৯৮৪,
৩৭বর্ষ, ৫ম-৬ষ্ঠ সংখ্যা
পরিবেশ সংখ্যা




দ্রঃ--

হাতে তৈরি অতি প্রাথমিক ব্যবস্থা দিয়ে পরীক্ষা সম্পূর্ণ সফল৤
এবার উপরে প্রদর্শিত যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা করা দরকার৤

নোট:
দূষণ ভারতের চার প্রধান শহর দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, কোলকাতা-য় কোথায় কত তার উল্লেখ থাকে আনন্দবাজার পত্রিকায় রোজই৤ তাতে দেখা যায়, কোলকাতা দ্বিতীয়, ৩য়, ৪র্থ অবস্থানে থাকে৤  ১২জুলাই ২০১৮ তারিখের উল্লেখে দেখা গেল কোলকাতার দূষণ খুবই কম, কমে সবার নিচে, তার আগে কদিন ধরে ভালোই বৃষ্টি হয়েছে৤ বোঝা গেল বৃষ্টিতে বাতাসের ধূলিকণা ইত্যাদি ধুয়ে গিয়ে বাতাসের দূষণ কমেছে৤ আগেও তা দেখা  গেছে৤ বৃষ্টি হলেই বাতাসের দূষণ কমে যায়৤ 
        অর্থাৎ ‘বাবিকা’ যে একটি সফল প্রক্রিয়া তা এতে প্রমাণ হয়৤ এই প্রকল্পেও  বাতাসের ধূলিকণা জলে ধুয়ে বাতাস বিশুদ্ধ হয়৤




সামান্য পরিমার্জিত -- ৩০.১১.২০১৮ 








No comments: